ঘুম আমাদের জীবনের অপরিহার্য একটি অংশ। সুস্থ দেহ ও মস্তিষ্ক বজায় রাখতে সঠিক পরিমাণে ঘুম অত্যন্ত জরুরি। সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়। কিন্তু যখন এই সময়সীমা অতিক্রম করে ৯-১০ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় ঘুমানো হয়, তখন সেটি অতিরিক্ত ঘুম বা হাইপারসমনিয়া হিসেবে গণ্য হয়। যদিও ঘুম আমাদের শরীরের শক্তি পুনরুদ্ধার করে, কিন্তু অতিরিক্ত ঘুম উল্টো শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত জানব, অতিরিক্ত ঘুম শরীরের উপর কীভাবে প্রভাব ফেলে এবং এর সম্ভাব্য কারণ, ক্ষতিকর দিক ও প্রতিকার।
অতিরিক্ত ঘুমানোর পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে, যেমন —
অতিরিক্ত ঘুম মস্তিষ্কের কার্যকারিতা হ্রাস করতে পারে। গবেষণা বলছে, দীর্ঘ সময় ঘুমানো স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। সময়ের সাথে সাথে এটি ডিমেনশিয়া ও আলঝেইমারের ঝুঁকি বাড়ায়।
যারা নিয়মিত বেশি সময় ঘুমান, তাদের মধ্যে প্রায়ই মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা ও অবসাদ দেখা দেয়। এর পেছনে মস্তিষ্কে সেরোটোনিন ও ডোপামিনের ভারসাম্যহীনতা দায়ী।
অতিরিক্ত ঘুম শরীরের মেটাবলিজম ধীর করে দেয়। ফলে শরীরে ক্যালোরি বার্ন কমে যায় এবং ওজন বেড়ে যায়। স্থূলতা আবার ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়।
বেশি ঘুম ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি করতে পারে, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
বিভিন্ন গবেষণা প্রমাণ করেছে যে যারা প্রতিদিন ৯-১০ ঘণ্টার বেশি ঘুমান, তাদের হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি ৩৩% পর্যন্ত বেড়ে যায়।
অতিরিক্ত ঘুম ডিপ্রেশন ও উদ্বেগের লক্ষণকে আরও বাড়িয়ে তোলে। এতে জীবনের প্রতি আগ্রহ কমে যায়, প্রোডাক্টিভিটি হ্রাস পায়।
অনেকেই ভাবেন শুধু ঘুমের ঘাটতিই ক্ষতিকর। কিন্তু বাস্তবে, যেমন ৪-৫ ঘণ্টা ঘুম শরীরের ক্ষতি করে, তেমনি ৯-১০ ঘণ্টার বেশি ঘুমও একইভাবে ক্ষতিকর হতে পারে। দু’ক্ষেত্রেই শরীরের হরমোন ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে।
প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও জাগার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
ঘুমানোর আগে মোবাইল, টিভি বা কম্পিউটার ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। অন্ধকার ও নীরব ঘুমের পরিবেশ তৈরি করুন।
দুপুরের পর দীর্ঘসময় ঘুমানো রাতে অনিদ্রা ও সকালে ক্লান্তির কারণ হতে পারে।
প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম শরীর ও মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখে, ফলে ঘুমের সময় কম লাগে কিন্তু মান উন্নত হয়।
ডিপ্রেশন বা উদ্বেগ থাকলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
যদি আপনি প্রতিদিন ৯ ঘণ্টার বেশি ঘুমিয়েও সবসময় ক্লান্তি, মাথাব্যথা, মনোযোগহীনতা বা শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন, তবে অবশ্যই ডাক্তার দেখানো উচিত। এগুলো স্লিপ অ্যাপনিয়া, থাইরয়েডের সমস্যা, ডিপ্রেশন বা অন্যান্য জটিল রোগের লক্ষণ হতে পারে।
সঠিক ঘুমের পরিমাণ আমাদের সুস্থ জীবনের জন্য অপরিহার্য। অতিরিক্ত ঘুম যেমন শারীরিক, তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই আমাদের উচিত নিজের জীবনযাত্রা ও ঘুমের সময়সীমা এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা, যাতে দেহ ও মনের জন্য উপযুক্ত বিশ্রাম পাওয়া যায় কিন্তু ক্ষতিকর মাত্রায় দীর্ঘ না হয়। মনে রাখবেন — “যতটা প্রয়োজন, ততটাই ঘুমই সুস্থতার চাবিকাঠি”।
আরও পড়ুন: পুরুষত্ব ধরে রাখার সাতটি প্রাকৃতিক উপায়: সুস্থ জীবন ও আত্মবিশ্বাসের চাবিকাঠি