মাগুরা জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর এবং জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে “প্রযুক্তি নির্ভর যুবশক্তি বহুপাক্ষিক অংশীদারিত্বে অগ্রগতি” এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে ১২ আগস্ট মঙ্গলবার মাগুরায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবস উদযাপন করা হয়।
সকাল দশটায় মাগুরা যুব ভবনের হল রুমে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যেখানে শপথ গ্রহণ, আলোচনা সভা, যুব ঋণচেক বিতরণ, প্রশিক্ষণের সনদপত্র প্রদান এবং পুরস্কার বিতরণসহ নানা কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর আয়োজিত র্যালি থেকে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বেলুন ও কবুতর উড়ানো হয়। পরবর্তীতে পারনান্দুয়ালী যুব উন্নয়ন মসজিদের মোয়াজ্জিন হাফেজ মোঃ রিয়াজুল ইসলাম পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন, আর মাগুরা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণার্থী সিমলা ঘোষ পবিত্র গীতা পাঠ করেন।
অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন মাগুরা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ ইলিয়াসুর রহমান। মাগুরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ আব্দুল কাদের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন মাগুরা সিভিল সার্জন ডা. মোঃ শামীম কবির।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ মাগুরা জেলা আমীর অধ্যাপক এমবি বাকের, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মাগুরা জেলা শাখার সভাপতি আলহাজ্ব মুফতি মোস্তফা কামাল, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মাগুরা জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা কাজী জাবের বিন মুহসিন (তাজ্জালা), মাগুরা প্রেসক্লাব সভাপতি অধ্যাপক সাইদুর রহমান। এ ছাড়াও মাগুরা সদর উপজেলার আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকারী নারগিস পারভীন, মাগুরা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ইউনুস আলী, সাধারণ সম্পাদক আলী আশরাফ, সাংগঠনিক সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, মহম্মদপুর উপজেলার আলামীন, মাগুরা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ ফারুক আহমেদ, দৈনিক খবর বাংলাদেশের সাংবাদিক রনি আহমেদ রাজু এবং বিএনপি মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক জেসমিন আক্তার স্মৃতি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: রুবাইয়াত হোসেন সভাপতি, মনিরুজ্জামান সাধারণ সম্পাদক: শহীদ জিয়া স্মৃতি সংসদ মাগুরা জেলা কমিটি ঘোষণা
প্রধান অতিথি মোঃ আব্দুল কাদের যুব সমাজের উদ্দেশে শপথ বাক্য পাঠ করান, যা ছিল একটি দৃঢ় সংকল্প যেখানে দেশের প্রতি অনুগত থাকার অঙ্গীকার, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে উদ্যোক্তা হওয়ার সংকল্প ব্যক্ত করে দেশ ও মানুষের সেবায় সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখার অঙ্গীকার করা হয়, পাশাপাশি অন্যায় ও দুর্নীতি থেকে বিরত থাকার প্রতিজ্ঞা নেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে মাগুরা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ আরব আলী স্বাগত বক্তব্য দেন।
যুব সমাজের কন্ঠ থেকে বক্তব্য রাখেন মাগুরার স্বনামধন্য যুব আত্মকর্মী ও উদ্যোক্তা মোঃ রকিবুল ইসলাম এবং সফল যুব সংগঠক ও সেইভ দ্যা উইমেন এন্ড চিলড্রেন সীতারামপুরের সভাপতি মোছাঃ সাবিনা ইয়াসমিন মেরি। অর্থবছর ২০২৪-২৫ এর সেরা আত্মকর্মী, যুব উদ্যোক্তা ও যুব সংগঠকদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন যুব আত্মকর্মী মোঃ রকিবুল ইসলাম, নাজমুল হুসাইন, মোঃ মামুন হোসেন, উদ্যোক্তা জান্নাত আরা, ফাতেমাতুজ জোহরা, এবং যুব সংগঠক মোছাঃ সাবিনা ইয়াসমিন মেরী, নাদিরা সুলতানা ও মোঃ গোলাম রাব্বী।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুবকদের সনদপত্র প্রদান করা হয় বিভিন্ন ট্রেডে যেমন কম্পিউটার ট্রেডে মোঃ জিহান মল্লিক, সুরাইয়া রাত্রি, ভার্মী কম্পোস্ট সার তৈরীর ট্রেডে মোঃ তরিকুল ইসলাম, ফারজানা ইয়াসমিন এবং মোঃ সুবহান বিশ্বাস।
এছাড়াও আত্মকর্মী যুব ঋণ গ্রহীতাদের মাঝে চেক বিতরণ করা হয়। মাগুরা সদর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর সীমা পোশাক তৈরী প্রকল্পের সীমা সুলতানা, পাটকেল বাড়ির মা ডেইরী ফার্মের নাজিম মোল্যা এবং মহম্মদপুর উপজেলার মোল্যা ভেটেনারী কর্নারের মোঃ মামুন মিয়া যথাক্রমে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার ঋণ চেক লাভ করেন। অনুষ্ঠানের শেষে অতিথিরা ৩৬ টি গাছের চারা রোপণ করেন এবং যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্ত করেন, যা পরিবেশ ও কৃষির উন্নয়নে একটি ইতিবাচক উদ্যোগ হিসেবে ধরা হয়।
মাগুরা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ আব্দুল কাদের যুব সমাজকে সময় নষ্ট না করে স্পষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, চাকরির পেছনে ছুটে গিয়ে সময় নষ্ট না করে উদ্যোক্তা হলে জীবনের মান উন্নয়ন সম্ভব হবে এবং যুবকদের মাদক ও নেশাজাতীয় পদার্থ থেকে দূরে থাকতে হবে।
তিনি আরও যোগ করেন যে, দারিদ্র্য, হতাশা ও ব্যর্থতা অনেক সময় মানুষকে নেশার পেছনে ঠেলে দেয় এবং এই থেকে মুক্তি পেতে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মাগুরার যুব সমাজ তাদের সক্ষমতা ও উদ্যোগ প্রদর্শনের সুযোগ পেয়েছে এবং দেশের উন্নয়নে নিজেদের অবদান রাখতে উদ্বুদ্ধ হয়েছে।