জহির শাহ্, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি | ৮ জুলাই ২০২৫
নির্বাচন শুধু ব্যালটের খেলা নয়—এটি ন্যায়বিচারের সংগ্রাম, বিবেকের রায়, আর জনগণের আস্থার ওপর গড়া এক মহামঞ্চ। সেই মঞ্চে উঠে এসেছেন মোহাম্মদ বাচ্চু মিয়া—ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের বলিখোলা গ্রামের সন্তান। তিনবার নির্বাচিত হয়ে নিজেকে জনগণের অকৃত্রিম প্রতিনিধি হিসেবে প্রমাণ করেছেন তিনি। তবে এবারের যাত্রা ছিল প্রতিকূলতার কণ্টকময় পথ পাড়ি দেওয়ার এক সাহসিক কাহিনী।
ঘটনা ২০২১ সালের। ভলাকুট ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী হন বাচ্চু মিয়া। কিন্তু বিজয়ী ঘোষণা করা হয় মো. তৈয়ব হোসেনকে—যিনি তখন একজন ফেরারি আসামি। আইন অনুযায়ী তিনি প্রার্থী হওয়ার যোগ্য ছিলেন না। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হলেও, নীরবতা ভেদ করে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বাচ্চু মিয়া থেমে থাকেননি। আদালতের দ্বারস্থ হয়ে শুরু করেন দীর্ঘ ৩ বছর ৭ মাসের এক আইনি লড়াই—যেখানে তার পাশে ছিল না কোনো প্রভাবশালী মহল, ছিল না অর্থবল, ছিল শুধু নিজের বিশ্বাস আর জনগণের ভালোবাসা।
শেষ পর্যন্ত সত্যের জয় হয়। আদালত রায় দেন বাচ্চু মিয়ার পক্ষে। বাতিল হয় অবৈধভাবে প্রাপ্ত মনোনয়ন। তার ভিত্তিতেই ২০২৫ সালের ৭ জুলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা নাসরিনের মাধ্যমে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করেন।
শপথের পর এক আত্মবিশ্বাসী বাচ্চু মিয়া বলেন,
“আমি ছিলাম, আছি এবং থাকব মানুষের পাশে। আজকের এই শপথ শুধু আমার নয়, পুরো গ্রামের মানুষের বিজয়।”
গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন বলেন,
“তিনি শুধু একজন মেম্বার নন, তিনিই আমাদের গ্রামের আত্মা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে তার প্রতিবাদ আমাদের সাহস দেয়।”
একজন বাচ্চু মিয়া—যিনি আইনের পথ বেছে নিয়ে লড়েছেন একা, কিন্তু হার মানেননি। তার এই বিজয় শুধু একটি ওয়ার্ডের নয়—এটি পুরো দেশের গ্রামীণ গণতন্ত্রের এক অনুপ্রেরণামূলক চিত্র।
এটি সেই বাস্তব কাহিনী—যেখানে একজন নিরীহ প্রার্থী, প্রতারিত হলেও চুপ থাকেননি, মাথা নোয়াননি। তিনি দাঁড়িয়েছিলেন আইনের পাশে, জনগণের পাশে—আর অবশেষে জয় হয়েছে ন্যায়ের, গণতন্ত্রের, এবং মানবিকতার।