কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার মানিকদী পূর্বকান্দা গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে দিপু মিয়া (২১) দালাল চক্রের প্রতারণা ও লিবিয়ায় মাফিয়া গ্যাংয়ের হাতে আটকের পর থেকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। পরিবারের দাবি, ইতালি পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে স্থানীয় দালাল তাঁর কাছ থেকে ইতোমধ্যে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এখন নতুন করে আরও ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করছে চক্রটি।
দিপুর পরিবার জানায়, ২০২৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর লিবিয়া পৌঁছানোর পর কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হন এবং পরবর্তীতে মাফিয়া চক্রের হাতে চলে যান। সেখানে নিয়মিত অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তিনি। কয়েক দিন পরপর মুখে কাপড় বেঁধে তাকে মারধরের ভিডিও ভিডিও কলে দেখানো হয় পরিবারকে। টাকা দিলে নির্যাতন কিছুদিন বন্ধ থাকে, কিন্তু পরে আবার শুরু হয়।
পরিবারের অভিযোগ, গ্রামের মফিজ কাজীর ছেলে ফজলুল হক সাত বছর ধরে বিদেশে লোক পাঠানোর কাজ করছেন। তাঁর মাধ্যমেই দিপু সাড়ে ৯ লাখ টাকায় ইতালি যাওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর দেড় মাসের মধ্যে প্রথম দফায় ১১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়, যা পরিবার পরিশোধ করে। এরপর দালালের নিয়ন্ত্রণে কয়েক মাস কাটানোর পর আবারও বিভিন্ন অজুহাতে টাকা নেওয়া হয়—কখনো ১০ লাখ, কখনো ৯ লাখ, কখনো ৫ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ১ বছর ১০ মাসে ৪৫ লাখ টাকা দিয়ে দিয়েছেন স্বজনরা।
সবশেষ ১৫ জুলাই দালাল ফজলুল হক সাড়ে আট লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় ১৬ জুলাই এক চক্র এসে দিপুকে তুলে নিয়ে যায়। ২৪ জুলাই থেকে শুরু হয় ভয়াবহ নির্যাতন, যা ভিডিও কলে দেখানো হয়। মুক্তি পেতে এখন ২৫ লাখ টাকা চাওয়া হচ্ছে, কিন্তু পরিবারের পক্ষে আর টাকা দেওয়া সম্ভব নয়।
দিপুর বড় ভাই মো. অপু বলেন, “নির্যাতনের দৃশ্য দেখা কঠিন। কিন্তু দেখতে হয়, কারণ আমরা জানি না পরের মুহূর্তে কী হবে। এরই মধ্যে ভিটেমাটি বিক্রি করেছি, আর কিছু করার ক্ষমতা নেই।”
দিপুর ভগ্নিপতি নজরুল ইসলাম, যিনি দীর্ঘ ২০ বছর সৌদি আরবে কাজ করে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন, তিনি বলেন, “নির্যাতনের দৃশ্য দেখার পর পকেটে টাকা রেখে বসে থাকা যায় না। সাধ্যমতো টাকা দিয়েছি, কিন্তু তাতেও নির্যাতন থামছে না।”
স্থানীয়রা জানান, দালাল ফজলুল হকের মাধ্যমে অনেকে নিরাপদে বিদেশে গেলেও অনেকেই প্রতারণা ও বিপদের শিকার হয়েছেন। দিপুর পরিবার এখন প্রশাসনের সহায়তা চাচ্ছে, যেন দ্রুত তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা যায়।
আরও পড়ুন: লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে ভয়াবহ বিপদে বাংলাদেশি তরুন
সম্পাদক ও প্রকাশক : আরিফুল ইসলাম আশিক
২০২৫ © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত