তানভীর ভুইয়া, বিজয়নগর প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অনির্দিষ্টকালের সিএনজি চালিত অটোরিকশার কর্মবিরতি শুরু হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। রোববার সকাল থেকে জেলার প্রায় প্রতিটি স্ট্যান্ডে সিএনজি অটোরিকশা বন্ধ থাকায় নেমে এসেছে অচলাবস্থা। যাত্রীদের অনেককে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। কেউ কেউ হেঁটে বা বিকল্প যানবাহনে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন, তবে ভাড়াও বেড়েছে কয়েকগুণ।
এ অবস্থায় অনেক এলাকায় সিএনজি চালকেরা টমটম বা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় যাত্রী পরিবহনেও বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এক যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ কাজে যাচ্ছি, কিন্তু সিএনজি নেই। বাধ্য হয়ে টমটমে উঠলেও সেটাও চলতে দিচ্ছে না ওরা। মাঝ রাস্তায় থামিয়ে দিচ্ছে। এটা সহ্য করা যাচ্ছে না।” এছাড়া কিছু এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় হামলার ঘটনাও ঘটেছে, যা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
এদিন জেলায় এইচএসসি ও আলিম সমমানের পরীক্ষা চলাকালীন সময় এই কর্মবিরতি শিক্ষার্থীদের জন্যও ভয়াবহ ভোগান্তি ডেকে আনে। অনেক পরীক্ষার্থী যথাসময়ে কেন্দ্র পৌঁছাতে হিমশিম খায়।
সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, “ট্রাফিক পুলিশের ঘুষ, হয়রানি, বিনা কারণে গাড়ি জব্দ ও লাইসেন্স সংক্রান্ত দুর্নীতির প্রতিবাদে আমরা এই কর্মসূচি নিয়েছি।” তিনি আরও জানান, জেলার বিভিন্ন স্থানে পারমিট থাকা সত্ত্বেও সিএনজিগুলো চলতে দেওয়া হচ্ছে না। মালিক-চালকদের উল্লেখযোগ্য দাবি হলো— আটককৃত গাড়ি নিঃশর্তে মুক্তি, পারমিট অনুযায়ী চলাচলের অনুমতি এবং পুলিশি হয়রানি বন্ধ।
শনিবার শহরে সিএনজি চালক ও মালিকরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশও করেছেন। তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।
এদিকে পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, কেবলমাত্র যেসব যানবাহনের বৈধ কাগজপত্র নেই সেগুলোই আটক করা হচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, “কাগজ দেখালে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। কেউ হয়রানির শিকার হচ্ছেন না।” তিনি আরও বলেন, “তাদের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিনিধি আমাদের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ করেননি। তারা চাইছেন কোনো গাড়ি যেন পুলিশ ধরতে না পারে—এটা তো নিয়মের বাইরে।”
জেলা জুড়ে যান চলাচলের এই অচলাবস্থায় সড়ক হয়ে উঠেছে নীরব, যাত্রীরা অসহায়, আর মালিক-শ্রমিকদের মাঝে ক্ষোভ প্রবল। দ্রুত এই পরিস্থিতির সমাধান না হলে জনজীবন বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।