নদী ভাঙন বর্তমানে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উরফি ইউনিয়নের মানিকহার থেকে মধুপুর পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় অত্যন্ত ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিবছর এই অঞ্চলে মধুমতি নদীর স্রোত ও মাটি ভাঙ্গা নিয়ে লোকালয়ে উদ্বেগ থাকলেও, এবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। বর্ষা মৌসুমে পানির উচ্চতা ও প্রবাহ অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় ভাঙনের গতি কয়েকগুণ বেড়ে গেছে — এর ফলে প্রতিদিন বসতবাড়ি, ফসলি জমি, মসজিদ-মাদ্রাসা, গ্রামীণ সড়কসহ নানান গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নদীর গর্ভে বিলীন হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের জানানো মতে, গত দুই মাসে এ এলাকা থেকে কমপক্ষে ১০০টির বেশি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। অনেকে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন, আবার কেউ কেউ উন্মুক্ত মাঠে অস্থায়ী কাঠামো গড়ে বসবাস করছেন। মানিকহারের পার্থ দাস এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “গত বছর কিছু জমি নদীতে গিয়ে বেঁচে ছিল, এ বছর ভাঙন দমে নেই — আমার প্রতিবেশী বাসভিটা ও ফসলি জমি সবই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।” একইভাবে, মধুপুর গ্রামের গ্রাম পুলিশ মাজেদ সরদার শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “প্রতিদিন মনে হয় আজই নদী আমাদের ঘর টেনে নেবে; বাচ্চাদের নিয়ে সব সময়ই ভয়ে দিন কাটাতে হয়।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভাঙ্গন প্রতিরোধের জন্য একাধিকবার পরিদর্শনে এসেছে, তবে এখনও উল্লেখযোগ্য স্থায়ী প্রভাবশালী পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। সাধারণত বর্ষা মৌসুমে অস্থায়ী বালু বস্তা ফেলার মতো ছোঁয়াচে উদ্যোগ নেয়া হয়, কিন্তু তা বর্ষার প্রবল স্রোতের কাছে অসহায় হয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন: গোপালগঞ্জে র্যালি-অনুদান-সনদ: যুব দিবসের দিনটি ছিল উদ্বুদ্ধকর
উরফি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনির গাজী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। আমরা জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে বারবার যোগাযোগ করেছি; যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, আরো শতাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে।” স্থানীয় পর্যবেক্ষকেরাও মনে করেন—মধুমতি নদীর ভাঙন একমাত্র মানিকহার ও মধুপুর নয়, আশপাশের একাধিক গ্রামকে বিপদে ফেলছে, যদি তৎক্ষণাৎ করণীয় না হয়।
স্থানীয় ওসরূপ প্রতিক্রিয়ায় অপরাধ ও অসহায়তা কেবল মানুষের জীবন নয়, ঐতিহ্য ও সামাজিক গতিশীলতার প্রতীকগুলোকে নদীগর্ভে চিরতরে হারাবে। অথচ এই দ্বিধাহীন নদী রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এখনও স্থায়ীভাবে গৃহীত হয়নি। পরিস্থিতির সমাধানে শুধু অস্থায়ী বাধার থেকে অনেক বেশি কিছু দরকার—যেমন স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ, নদীতীর সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার বাস্তবায়ন, দ্রুত তহবিল বরাদ্দ এবং দ্রুততর নির্বাহী পদক্ষেপ।