মাগুরা সদর উপজেলার বিএডিসি সারগোডাউনে ডিলারের নামে অবৈধভাবে সার বিক্রির অভিযোগে স্থানীয়রা হাতেনাতে একটি সিন্ডিকেটকে ধরেছেন। বৃহস্পতিবার সকালে প্রায় ৪০ বস্তা সার বিভিন্ন নসিমন ও নাটা অটোযোগে বাইরে পাচারের সময় ঘটনাটি ঘটেছে। এক বস্তা সার গেটম্যানের কক্ষের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তারা বাধা দিলে সিন্ডিকেটের সদস্যরা দ্রুত গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়।
উপসহকারী পরিচালক এস এম মাহবুবুর রহমান দাবি করেছেন, সারগুলো ডিলারের কাছ থেকে ক্রয়কৃত। তবে তিনি কোন প্রকার ক্যাশ মেমো, বিল-ভাউচার বা ডিলারের প্রত্যয়নপত্র দেখাতে পারেননি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে চাননি এবং সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে বিষয়টি ‘ম্যানেজ’ করার চেষ্টা করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ডিলার অভিযোগ করেছেন, চলতি মৌসুমে তারা সরকারি চাহিদা অনুযায়ী সার পাচ্ছেন না। তারা জানিয়েছেন, অফিস সহকারীর হাতে ঘুষ না দিলে সার উত্তোলন সম্ভব নয়। ডিলাররা আরও অভিযোগ করেছেন, গোডাউনের ভেতরে দীর্ঘদিন ধরে একটি অদৃশ্য সিন্ডিকেট কাজ করছে, যারা সরকারি নির্ধারিত রেটের বাইরে সার বিক্রি করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এবং কৃষকদের হাতে বেশি দামে সার পৌঁছে দেয়। ডিলার আকবর আলী বলেন, “গত পাঁচ বছরের গোডাউনের স্টক ও চলতি বছরের বরাদ্দের অডিট দুদক দিয়ে করানো হলে আসল চিত্র বেরিয়ে আসবে।”
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. তাজুল ইসলাম বলেন, “সরকারি ডিলারের নাম ব্যবহার করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও অবৈধ বিক্রি আইনের চোখে গুরুতর অপরাধ। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।” মাগুরা জেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোবিন্দ কুমার জোয়ার্দার জানান, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মাগুরা জেলায় ৬৩,৩৮২ মেট্রিক টন সার বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে ইউরিয়া ৩২,৩৪৫ মেট্রিক টন, টিএসপি ৭,৮৮৪ মেট্রিক টন, ডিএপি ১৪,৮৯২ মেট্রিক টন এবং এমওপি ৮,২৬৯ মেট্রিক টন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ডিলাররা সর্বোচ্চ ২ টাকা কেজি বেশি দামে বিক্রি করতে পারেন, কিন্তু বাস্তবে অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন: মাগুরায় শপথ, পুরস্কার ও উদ্যোক্তা প্রেরণায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবস উদযাপন
২০২৪-২৫ অর্থবছরে মাগুরা বিএডিসির তিনটি গোডাউনে মোট ১০,৬৫০ টন সার মজুদ রয়েছে। জেলার মোট ২১০টি ডিলারের মধ্যে মাগুরায় ১১৪টি এবং ঝিনাইদহে ৯৬টি। স্থানীয় কৃষকরা জানান, সরকারি নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও তারা ডিলারের মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে সার পাচ্ছেন না, ফলে খোলা বাজার থেকে বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। এর ফলে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ফসল উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটছে।
মাগুরা জেলা প্রশাসন ও দুদক বিষয়টি তদন্ত করছে। প্রমাণ মিললে দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : আরিফুল ইসলাম আশিক
২০২৫ © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত