ভৈরবে কৃষিতে নীরব এক বিপ্লব ঘটাচ্ছে বাদাম চাষ। কম খরচে বেশি মুনাফা ও ভালো বাজারদরের কারণে প্রতিনিয়তই কৃষকরা ধান ছেড়ে বাদাম চাষের দিকে ঝুঁকছেন। চলতি মৌসুমে ভৈরব উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের চরাঞ্চলে ৪৫৫ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় বেশ উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস।
মেঘনা-ব্রহ্মপুত্র বিধৌত বেলে-দোআঁশ মাটি বাদাম চাষের জন্য খুবই উপযোগী হওয়ায় কৃষকরা প্রতিবছরই বাদাম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপী গ্রামের কৃষক নাজমুল মিয়া বলেন, “প্রতি বিঘা জমিতে তিন-চার হাজার টাকা খরচে ছয়-সাত মণ বাদাম পাওয়া যায়, যা বিক্রি হয় প্রায় ১৯-২২ হাজার টাকায়। শুধু তাই নয়, বাদাম গাছ গরুর খাদ্য এবং রান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। তাই বাদাম চাষ এখন লাভজনক ফসল।”
ছবি: সংগ্রহীত
গজারিয়া ইউনিয়নের মানিকদি গ্রামের কৃষক দুলাল মিয়া জানান, ধানের তুলনায় বাদাম চাষে দ্বিগুণ লাভ। তিনি এ বছর তিন খানি জমিতে বাদাম চাষ করে প্রতিটিতে পেয়েছেন ৫০০ কেজি বাদাম।
ভৈরবের বাদাম শুধু স্থানীয় চাহিদা মেটায় না, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ হয়। বাদাম ব্যবসায়ী মুসলিম মিয়া জানান, এখানকার বাদামের মান ভালো হওয়ায় দেশজুড়ে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। মৌসুমে প্রতি মণ বাদাম ৩২০০-৩৪০০ টাকা দরে বিক্রি হয়, আর অফ-সিজনে এই দাম আরও ৮০০-৯০০ টাকা বেড়ে যায়।
এখানকার বাদাম শিল্পকে ঘিরে গড়ে উঠেছে প্রায় ১৫-২০টি প্রক্রিয়াজাতকরণ মিল, যেখানে কয়েকশ’ নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। নারী কর্মীরা প্রতিদিন গড়ে ৮০০-৯০০ টাকা আয় করে সংসারে সচ্ছলতা আনছেন।
ভৈরব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকলিমা বেগম জানান, বাদাম চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে দেখে কৃষি বিভাগ উন্নত বীজ, সঠিক চাষপদ্ধতি ও রোগবালাই নিয়ন্ত্রণে নানা ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।
কৃষকদের ভাষায়— “ধান নয়, বাদামেই এখন ভাগ্য বদলের গল্প লেখা হচ্ছে ভৈরবে।”