স্মৃতি ফিরে এলো, আবারও মুখর হয়ে উঠলো প্রিয় সেই স্কুল মাঠ। দীর্ঘ দুই দশকের ব্যবধানে হারিয়ে যাওয়া বন্ধুরা ফিরে এলো আবারও, একে অপরকে জড়িয়ে ধরতে। আজ ৯ জুন ২০২৫, কালিকাপ্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ যেন রূপ নিয়েছিল এক স্মৃতির উৎসবে। এসএসসি ব্যাচ ২০০৪, ২০০৫ ও ২০০৬ সালের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা মিলিত হয়েছিলেন পূর্ণমিলনী অনুষ্ঠানে।
স্মৃতি আর আবেগে ভাসা সেই দিনটি ছিল আনন্দ-বেদনায় মিশ্রিত এক মিলনমেলা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা জনাবা শাহানা বেগম, সহকারী শিক্ষক আহাদ মিয়া, রুকন উজ জামান এবং ধর্মীয় শিক্ষক নুরুল ইসলাম। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এই পুনর্মিলন যেন হারিয়ে যাওয়া শৈশবের হাতছানি।
প্রাক্তন ছাত্ররা একে একে মাইকে দাঁড়িয়ে বলতে থাকেন তাঁদের স্কুলজীবনের মধুর স্মৃতি, হাসি-কান্না, শাসন আর ভালোবাসার গল্প। অনেকেই আবেগ ধরে রাখতে পারেননি—চোখের কোণে জল চিকচিক করে উঠেছিল।
শিক্ষক আহাদ মিয়া বলেন,
"তোমাদের মাঝে ফিরে এসে মনে হচ্ছে—আমি যেন ফিরে গেছি সেই সময়টাতে। চাইবো এই আয়োজন যেন প্রতি বছর এমনভাবেই আরও বড় পরিসরে অনুষ্ঠিত হয়।"
সবচেয়ে আবেগঘন মুহূর্ত তৈরি হয় প্রধান শিক্ষিকা শাহানা বেগমের বক্তব্যে। তিনি বলেন—
"আজ আমি শুধু একজন প্রধান শিক্ষিকা হয়ে আসিনি, এসেছি সেই পুরোনো দিনের ‘শাহানা ম্যাডাম’ হয়ে। তোমাদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছি। তোমাদের ভালোবাসার রঙের সঙ্গে মিলিয়ে ওড়না পরেছি। এই মিলন শুধু আয়োজন নয়—এ যেন ফিরে যাওয়া কৈশোরে, শ্রেণিকক্ষে তোমাদের ভালোবাসার কাছে।"
তিনি আরও বলেন—
"আজকের প্রজন্ম মোবাইল আসক্তির মাঝে ডুবে যাচ্ছে। তোমাদের বলছি—প্রযুক্তির ভালো দিক ব্যবহার করো, কিন্তু কখনও ভুলে যেও না, সামনাসামনি যোগাযোগের শক্তিই সবচেয়ে বড় শক্তি। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, সরাসরি কথা বলার আনন্দ যেন ভুলে না যাও।"
সবার কণ্ঠে বারবার উচ্চারিত হচ্ছিল সেই হৃদয়স্পর্শী স্লোগান—
"এসো স্মৃতির প্রাঙ্গণে, মিলি প্রীতির বন্ধনে।"
এটি যেন আজকের অনুষ্ঠানের মূল সুর হয়ে উঠেছিল।
এসএসসি ব্যাচ ২০০৬ এর শিক্ষার্থী মো: খোকন মিয়া বলেন—
"এসো স্মৃতির প্রাঙ্গণে, মিলি প্রীতির বন্ধনে " আজকের অনুষ্ঠানে বিশ বছর পর আমাদের ব্যাচমেট একসাথে হতে পেরে অনেক আনন্দ উল্লাস করতে পেরেছি আগামীতে এই অনুষ্ঠানটি আরো বৃহৎ আকারে করতে সবার সহযোগিতা কামনা করছি।"
এসএসসি ব্যাচ ২০০৪ এর শিক্ষার্থী মো: রুবেল আহমেদ বলেন—
"আমরা অত্যন্ত আনন্দ উল্লাসে দিনটি উপভোগ করেছি। আড্ডা, নতুন পুরাতনের সাথে পরিচিতি ও আনন্দ ভাগাভাগি করি। এ দিনটি স্কুল লাইফের মতো ছিল। হাসাহাসি, দৌড়াদৌড়ি ও ক্রিড়া প্রতিযোগিতায় পরিপূর্ণ।"
প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অনেকেই বলছিলেন—
"এই দিনটি আমাদের জীবনের অন্যতম সেরা দিন। আজ বুঝলাম, স্কুল শুধু একটি প্রতিষ্ঠান নয়, স্কুল মানে স্মৃতির এক বিশাল সমুদ্র।"
অনুষ্ঠান শেষে প্রতিজ্ঞা করা হয়— এই বন্ধন ছিন্ন হবে না। প্রতিবছর যেন এমন স্মৃতিময় আয়োজন হয়, সেই লক্ষ্যে সকলে একমত হন।
অনুষ্ঠান শেষে আয়োজন করা হয় এক আনন্দঘন মধ্যাহ্নভোজের। প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীরা, শিক্ষকরা সবাই একসঙ্গে বসে স্মৃতিময় গল্পের মাঝেই উপভোগ করেন সুস্বাদু খাবার। মিলনমেলার এই অংশটি যেন আরও গভীর করে তোলে তাঁদের বন্ধনকে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : আরিফুল ইসলাম আশিক
২০২৫ © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত