জহির শাহ্, বিশেষ প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া | ১১ জুলাই ২০২৫
টানা বৃষ্টি ও চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের ধীরগতির কারণে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে ভয়াবহ যানজট তৈরি হয়েছে। ৯ জুলাই রাত থেকে শুরু হওয়া এই যানজট শুক্রবার (১১ জুলাই) পর্যন্ত টানা সাড়ে ১০ কিলোমিটার এলাকায় বিস্তৃত হয়েছে। আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে বাড়িউরা পর্যন্ত রাস্তায় পণ্যবাহী ট্রাক, বাস, কাভার্ডভ্যান থেমে আছে, যাত্রীরা পায়ে হেঁটে পথ অতিক্রম করছেন।
বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সরাইল বিশ্বরোড মোড়, আশুগঞ্জ চত্বর, কুট্টাপাড়া, শান্তিনগর ও খড়িয়ালা এলাকা। বর্ষণের পানিতে রাস্তার গর্তগুলো পুকুরে পরিণত হয়েছে। যানজটের প্রভাব পড়েছে আশপাশের আঞ্চলিক রুটগুলোতেও, যেমন সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই এবং কুমিল্লা-সিলেট সড়ক।
যানজটের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে ভারতের অর্থায়নে চলমান ঢাকা-আখাউড়া চার লেন প্রকল্পের ধীরগতি। ২০২৩ সালের মাঝামাঝিতে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০২৪ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কার্যত থমকে যায়। এরপর ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচারের কর্মকর্তারা কাজ থেকে সরে গেলে প্রকল্পের অগ্রগতি থেমে যায়।
এই প্রকল্পের আওতায় সরাইল বিশ্বরোড থেকে আশুগঞ্জ চত্বর পর্যন্ত বারবার রাস্তা খুঁড়ে আবার বৃষ্টিতে তা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ প্রতিদিন সাময়িক সংস্কারের চেষ্টা করলেও তা কাজে আসছে না।
যানজট সামাল দিতে হাইওয়ে পুলিশ, থানা পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিরলস কাজ করলেও মূল সমস্যার স্থায়ী সমাধান এখনো অনিশ্চিত। খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসি মামুন রহমান বলেন, “টানা বৃষ্টি ও দীর্ঘ সময় ধরে চলমান উন্নয়ন কাজের কারণে গাড়ি চলাচল প্রায় বন্ধ। বর্তমানে সাড়ে ১০ কিলোমিটার এলাকায় যান চলাচল থমকে আছে।”
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন বিকল্প রুট ব্যবহারের অনুরোধ জানালেও পণ্যবাহী যানবাহনের ক্ষেত্রে তা কার্যকর হয়নি। চালক ও যাত্রীরা জানিয়েছেন, বিকল্প রাস্তাগুলো সরু ও ভাঙা, ভারী যানবাহনের উপযোগী নয়।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানায়, বৃষ্টি কমলে জরুরি ভিত্তিতে সংস্কারকাজ শুরু করা হবে। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সমন্বয়ের অভাবেই প্রকল্পটি কাঙ্ক্ষিত গতি পাচ্ছে না।
এই যানজট শুধু ভোগান্তি নয়, দেশের মহাসড়ক ব্যবস্থাপনায় অব্যবস্থাপনার প্রতিচ্ছবিও বটে।