ফিলিস্তিন: আমাদের ঈমানের আয়না
– মোহাম্মদ উল্লাহ মাহমুদী
যখন আকাশ থেকে আগুন ঝরে, ভূমি কেঁপে উঠে শিশুদের আর্তনাদে, তখন একটাই প্রশ্ন জাগে— আমাদের হৃদয় কি নিস্তব্ধই থেকে যায়? ফিলিস্তিন, গাজা কিংবা লেবাননের রক্তাক্ত প্রান্তর কেবল যুদ্ধক্ষেত্র নয়—এগুলো মুসলিম উম্মাহর আত্মপ্রতিচ্ছবি, নিস্ক্রিয়তার নির্মম আয়না।
ইসরায়েলের বর্বরতা কোনো সাধারণ রাজনৈতিক সংঘাত নয়; এটি এক গভীর মানবিক, ধর্মীয় এবং নৈতিক বিপর্যয়। পবিত্র মসজিদুল আকসার অবমাননা, বয়োবৃদ্ধদের হত্যা, নিষ্পাপ শিশুদের অগ্নিদগ্ধ করে দেওয়ার মতো হৃদয়বিদারক চিত্র শুধু সংবাদের শিরোনাম নয়—বরং তা ঈমানদারদের হৃদয়ে তীব্রভাবে নাড়া দেওয়ার এক কঠিন পরীক্ষা।
আজকের তথাকথিত সভ্য বিশ্ব যখন জালিমদের পক্ষ নেয়, তখন মতভেদ থাকা সত্ত্বেও যারা ন্যায়ের পক্ষে, বিশেষত ইরানের মতো কিছু রাষ্ট্র যে অবস্থান নিয়েছে, তা চোখে পড়ার মতো। আমাদের মূল্যায়ন হওয়া উচিত ইসলামি আদর্শের আলোকে—মাজহাবের গণ্ডির বাইরে গিয়ে উম্মাহর বৃহত্তর স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে।
নীরবতা কেবল মজলুমদের কষ্ট বাড়ায় না, বরং জালিমদের সাহসও বাড়িয়ে দেয়। তাই যারা নিজেদের ঈমানদার বলে দাবি করেন, তাদের বুঝে নেওয়া দরকার—দোয়ার পাশাপাশি এখন প্রয়োজন জাগ্রত হৃদয়, সাহসী কলম ও সত্য উচ্চারণের কণ্ঠস্বর।
আমরা যদি আজও নিরব থাকি, চোখ ফিরিয়ে নিই, কিংবা শুধু কান্না করি—তবে আগামী প্রজন্ম আমাদের স্মরণ করবে আত্মকেন্দ্রিক ও দায়িত্বহীন এক জাতি হিসেবে। সময় এসেছে হৃদয়ের অন্তস্তল থেকে জাগরণের—চোখে জল, মুখে সত্য আর কলমে প্রতিবাদের ভাষা নিয়ে।
ঈমান শুধু অনুভূতি নয়—এটি একটি অবস্থান। সেই অবস্থান নির্ধারিত হয় জালিমের বিরুদ্ধে এবং মজলুমের পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমে। এক উম্মাহ যখন দেখে না, শোনে না, অনুভব করে না—তখন সে শুধু দুর্বল নয়, বরং নিজের আত্মপরিচয় হারায়।
আজ প্রয়োজন ব্যথিত নয়, জাগ্রত হৃদয়। প্রয়োজন সেই কলম, যা সত্য লিখতে ভয় পায় না; সেই কণ্ঠ, যা নির্দ্বিধায় বলে—“জুলুমের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোই ঈমানের দাবি।”
হে আল্লাহ!
আমাদের অন্তর জাগিয়ে দিন,
ন্যায় ও ইনসাফের পথে পরিচালিত করুন,
মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করুন,
মজলুম ফিলিস্তিনিদের হেফাজত করুন,
আর তাদের বিজয় দিন।
আমীন।