ডিজিটাল ডেস্ক – বুধবার রাতে ইরানের আকাশে দেখা যায় এক উজ্জ্বল আগুনের বল। মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে দৃশ্যটি। অনেকেই একে উল্কা বা অজানা কোনো মহাজাগতিক বস্তু ভেবে ভুল করেন। কিন্তু মধ্যরাতের পর ইরানের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়—এটি তাদের অত্যাধুনিক হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘ফাত্তাহ’, যা শব্দের চেয়ে প্রায় ১৫ গুণ বেশি গতিতে ছুটে চলে।
এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ছিল ইরানের 'অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি'-এর অংশ। লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আঘাত হানা। ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) এই ক্ষেপণাস্ত্রের সক্ষমতাকে “যুদ্ধক্ষেত্রে এক সন্ধিক্ষণ” বলে অভিহিত করে।
ফাত্তাহ একটি দুই ধাপবিশিষ্ট, কঠিন জ্বালানিচালিত হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এর সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় প্রায় ১৮ হাজার কিলোমিটার (ম্যাক ১৫ পর্যন্ত) এবং এটি প্রায় ১,৪০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। বিশেষত্ব হলো—ফাত্তাহ মাঝপথে গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে, যা একে অধিকাংশ প্রচলিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য প্রায় অপ্রতিরোধ্য করে তোলে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, হাইপারসনিক গতিসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র এখনো বিশ্বের হাতে সীমিত সংখ্যক রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন এবং ভারত—এই চারটি দেশের পর ইরান এই প্রযুক্তির সফল ব্যবহারকারী হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করলো।
ফাত্তাহ উৎক্ষেপণের কিছুক্ষণ পরই ইসরায়েল পাল্টা জবাব দেয়। কারমানশাহ প্রদেশসহ ইরানের অভ্যন্তরে বেশ কয়েকটি সামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। লক্ষ্য ছিল হেলিকপ্টার ঘাঁটি, ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র এবং পারমাণবিক সংশ্লিষ্ট স্থাপনা।
এই হামলার ফলে তেহরানে এবং আশপাশের এলাকায় বিকট বিস্ফোরণ শোনা গেছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী দাবি করেছে, এসব হামলার মাধ্যমে তারা ইরানের ভবিষ্যৎ হামলা সক্ষমতা হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছে।
ইরান ও ইসরায়েল উভয়পক্ষই তাদের সর্বাধুনিক অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করছে। এর ফলে সংঘাত ক্রমেই গতি পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকরা আজ শুক্রবার জেনেভায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করার কথা জানিয়েছে। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রতিবেদনে এসেছে) সংঘাত প্রশমনে দুই সপ্তাহ সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন, যা ভবিষ্যতের কূটনৈতিক গতিপথ নির্ধারণে ভূমিকা রাখতে পারে।
সংক্ষিপ্তভাবে:
সম্পাদক ও প্রকাশক : আরিফুল ইসলাম আশিক
২০২৫ © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত