স্টাফ রিপোর্টার: জহির শাহ্
চেহারায় নিষ্পাপ, ভেতরে ভয়। দাঁতে ধারালো কামড়, আচরণে দানবিক আগ্রাসন—নাম তার পিরানহা। এই ভয়ংকর মাছেই এবার প্রশাসনের কড়া নজরদারি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে এক মৎস্য আড়ত থেকে জব্দ করা হয়েছে প্রায় ৪০ কেজি নিষিদ্ধ পিরানহা। সঙ্গে আড়তদারকে করা হয়েছে আর্থিক জরিমানা।
গত ২৫ জুন বৃহস্পতিবার, নাসিরনগর উপজেলা সদরে অভিযান চালানো হয় এক মৎস্য হাটে। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য অধিদপ্তরের যৌথ দল সেখানে উপস্থিত হয়।
অভিযানে নেতৃত্ব দেন—
সহকারী কমিশনার (ভূমি): কাজী রবিউস সারোয়ার, সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা: ফাহিমুল আরেফীন।
আড়তের ভেতরেই মজুত অবস্থায় পাওয়া যায় ৪০ কেজি পিরানহা মাছ। এই অপরাধে কংশ দাস নামের এক আড়তদারকে ‘মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ আইন, ১৯৫০’ অনুসারে ৫০০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
✪ পিরানহা কেন এতটা বিপজ্জনক?
এই মাছটির বিপদ লুকিয়ে আছে এর আচরণ ও প্রকৃতির গভীরে— এর গঠন রূপচাঁদার মতো হলেও দাঁতগুলো ক্ষুরধার। স্বভাবগতভাবে আক্রমণপ্রবণ, জলজ পরিবেশে হঠাৎ করে হানার মতো আচরণ করে। অন্য মাছ ও জলজ প্রাণীর ক্ষতি করে। মানুষের শরীরে পৌঁছালে হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক ক্ষতি।
বাংলাদেশে এই মাছ সর্বোতভাবে নিষিদ্ধ—উৎপাদন, সংরক্ষণ, পরিবহন ও বিক্রি সব কিছুই বেআইনি।এর বিরুদ্ধে পরিবেশ ও মৎস্য অধিদপ্তর বহুবার সতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।
➤ জনস্বাস্থ্য নিয়ে আশঙ্কা বাড়ছে
স্থানীয়দের মতে, শুধু পিরানহা নয়—বাজারে এখনো ছড়াচ্ছে রাসায়নিক দিয়ে চাষ করা মাগুর, টেংরা ইত্যাদি মাছ, যা খেলে শরীরের ওপর পড়ে ভয়াবহ প্রভাব।
একজন অভিজ্ঞ মাছ বিক্রেতা বলেন—
“এই মাছ রূপচাঁদার মতো দেখে অনেকে ভুল করেন। চেহারায় চমক থাকলেও এটা আসলে ভেতরে ভেতরে ধ্বংস। যদি অভিযান না হতো, কেউ বুঝতেই পারত না।”
✆ প্রশাসনের বার্তা: কঠোর নজরদারি চলবে
সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজী রবিউস সারোয়ার এ বিষয়ে বলেন—
“এই মাছ সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষ জানেন না বলেই তারা ঠকছেন। আমরা শুধু ধরা নয়, সচেতন করার দিকেও নজর দিচ্ছি।”
তিনি আরও যোগ করেন—
“পিরানহা হোক বা বিষাক্ত মাগুর—জনস্বাস্থ্যের প্রশ্নে কোনো ছাড় নয়। নিয়মিত বাজার মনিটরিং চলবে।”
পিরানহা চিনতে পারেন নিচের লক্ষণগুলো দেখে:
1. দেখতে রূপচাঁদার মতো হলেও চামড়া অতিরিক্ত চকচকে
2. লেজ ও পাখনার কিনারায় লালচে দাগ বা রেখা
3. দাঁতগুলো ছোট ও ধারালো, একবার দেখলেই বোঝা যায়
4. আচরণে অন্যান্য মাছকে ধাওয়া করে, নিরীহ নয়
5. বাজারে পাওয়া যায় স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে