জহির শাহ্, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি, ৬ আগস্ট ২০২৫
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বিটঘর গ্রাম যেন ৫ আগস্ট সকালটায় পরিণত হয় এক শোকমগ্ন বীরত্বগাথার মঞ্চে, যেখানে শহীদ তানজিল মাহমুদ সুজয়সহ পাঁচ শহীদের সমাধিতে শ্রদ্ধা, অশ্রু আর ভালোবাসায় ভরে উঠে চারদিক।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবং নবীনগর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে আয়োজিত হয় আনুষ্ঠানিক শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজীব চৌধুরী নিজ হাতে শহীদদের কবরস্থানে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন এবং শ্রদ্ধা জানান। তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল মামুন, নবীনগর প্রেস ক্লাব সভাপতি মোহাম্মদ হোসেন শান্তিসহ এলাকার বিভিন্ন পেশাজীবী ও সচেতন নাগরিক।
শ্রদ্ধাঞ্জলি শেষে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা রফিকুল ইসলাম। এ সময় আবেগে আপ্লুত অনেকেই কেঁদে ফেলেন।
এরপর ইউএনও রাজীব চৌধুরী শহীদ তানজিল মাহমুদের পরিবারের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করে কষ্ট ভাগ করে নেন এবং রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে গভীর সহমর্মিতা জানান। মাত্র ১৯ বছর বয়সে ভাওয়াল সরকারি বদরে আলম কলেজের ছাত্র তানজিল মাহমুদ আশুলিয়ায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মিছিলে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। নির্মমতা এখানেই থেমে থাকেনি—তাঁর নিথর দেহটিকে একটি ভ্যানে করে নিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়, যা সমগ্র জাতিকে নাড়িয়ে দিয়েছিল।
আরও পড়ুন: মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ: একটি নাম, একটি আগুন, একটি যুগান্তকারী প্রস্থান
তানজিল আজ শুধুই একটি নাম নয়, বরং এক প্রতিবাদের প্রতীক, চেতনার মশাল, এবং তরুণ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। তাঁর সঙ্গে একই অনুষ্ঠানে শ্রদ্ধা জানানো হয় শহীদ রফিকুল ইসলাম, শহীদ কামরুল মিয়া, শহীদ জাহিদুজ্জামান তানভীন এবং শহীদ মো. জাহিদ হোসেনের কবরেও।
এটি কোনো আনুষ্ঠানিকতা নির্ভর ‘ফটোসেশন’ ছিল না—বরং একটি জাতি তার ইতিহাস ও সূর্যসন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ন্যায়ের পথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত ছিল।
এ ধরনের আয়োজন কেবল স্মরণ নয়, বরং ভবিষ্যৎ নির্মাণের প্রেরণা—যা তরুণদের মনে ন্যায়, সাহস ও সত্যের দীপ্ত আলো জ্বালিয়ে রাখতে সহায়ক হবে।