বিশেষ সংবাদদাতা :

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় সরকারি খাল দখল করে মৎস্য খামার গড়ে তোলার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় লাহুড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি সালাম সিকদারের বিরুদ্ধে। শুধু খাল দখলই নয়, তিনি নিজের রাজনৈতিক প্রভাব এবং পুলিশ কর্মকর্তা ছেলের ক্ষমতা ব্যবহার করে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি সাংবাদিকদের জীবন নাশের হুমকি দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে আওয়ামী লীগ নেতা সালাম সিকদার এবং তার ছেলে কুষ্টিয়া জেলা ডিবি পুলিশের ওসি আশরাফুল ইসলাম নয়নের বিরুদ্ধে।

স্থানীয়রা জানান, একদিকে তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, অন্যদিকে ছেলে ওসি পদে কর্মরত। এ দুই প্রভাব খাটিয়ে সালাম সিকদার সর্বত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি খাল দখল, নিয়োগ বাণিজ্য থেকে শুরু করে অবৈধভাবে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন তিনি। প্রশাসনের ভয়ে বা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে কেউ তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খোলার সাহস পায় না।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, লাহুড়িয়া ইউনিয়নের ইছামতি বিল এলাকায় লাহুড়িয়া বাজার থেকে মিঠাপুর বাজার সংলগ্ন পাকা সড়কের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সরকারি খালের এক একর জায়গা দখল করে সেখানে বড় আকারের মৎস্য খামার গড়ে তুলেছেন সালাম সিকদার। খাল দখল ছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, তিনি ভয়ভীতি দেখিয়ে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি নামমাত্র মূল্যে কিনে নিয়েছেন। এতে ওই এলাকার জমির মালিকরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

গরীব কৃষক পরিবারের সন্তান সালাম সিকদার এসএসসি পাস করে একসময় স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। তবে দলীয় প্রভাব এবং ছেলে আশরাফুল ইসলাম নয়নের পুলিশি দাপট কাজে লাগিয়ে বিগত ১৬ বছরে শহরে জমি ও বাড়িসহ বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে গেছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, অন্যের জমি দখল, ভয়ভীতি দেখানো এবং ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তিনি তার অবৈধ সম্পদ সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন।

ইছামতি বিলের কয়েকজন জমির মালিক জানান, সালাম সিকদারের মৎস্য খামার আমাদের চারপাশে বিস্তৃত হওয়ায় আমরা আর জমিতে যাতায়াত করতে পারছি না। জমি চাষাবাদ প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন যেন এই দখলদারিত্ব বন্ধ হয়।

শুধু জমি বা খাল দখল নয়, স্থানীয়দের আরও অভিযোগ রয়েছে—সন্ধ্যা নামলেই সালাম সিকদারের খামারের পাড়ে শুরু হয় মাদক ব্যবসা ও আসর। মাদকের এমন রমরমা অবস্থায় এলাকার তরুণ সমাজ ধ্বংসের পথে যাচ্ছে বলে দাবি বাসিন্দাদের।

এছাড়া সালাম সিকদারের বিরুদ্ধে নড়াইল সদর থানায় নাশকতার একটি মামলা ছিল। বর্তমানে তিনি জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারও এলাকায় সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। অভিযোগ আছে, তিনি গোপনে সংগঠনকে শক্তিশালী করার চেষ্টা চালাচ্ছেন এবং বিএনপি নেতাদের প্রকাশ্যে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন। এতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যেও ভেতরে ভেতরে বিভক্তি তৈরি হয়েছে।

এ বিষয়ে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক জানান, সালাম সিকদার ও তার ছেলে ওসির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করলে তাদের জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এতে সাংবাদিকরা আতঙ্কে রয়েছেন। ইতিমধ্যে জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিক—দৈনিক সকালের সময়, দৈনিক খবরপত্র, যশোর বার্তা এবং বিভিন্ন অনলাইন গণমাধ্যমে এই খবর প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, একজন রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তার ছেলের এভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করা দুঃখজনক এবং রাষ্ট্রের আইনের প্রতি চরম অবমাননা। সরকারি খাল দখলমুক্ত করা, মাদক ব্যবসা বন্ধ করা এবং হুমকির বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা।

আরও পড়ুন: গোপালগঞ্জ জেলা কারাগার এখন মাদকের আখড়া

এলাকার সাধারণ মানুষ এখন প্রশাসনের হস্তক্ষেপের অপেক্ষায় আছে। তাদের দাবি, সরকারি জমি ও খাল উদ্ধারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক এবং ক্ষমতার দাপটে যারা অন্যায় করছে, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।