নিজস্ব প্রতিবেদক:
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতিতে নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠছে ইসলামী ধারার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এসব দল এখন বৃহত্তর একাত্মতা গড়ে তুলতে চাচ্ছে—যার লক্ষ্য ইসলামী মূল্যবোধ-ভিত্তিক শক্তিশালী জোট গঠন এবং আসন্ন নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার।
সূত্র মতে, অন্তত ১৫টি ইসলামপন্থী দল বর্তমানে আলোচনা ও সমন্বয়ের পর্যায়ে আছে। এর মধ্যে রয়েছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, ইসলামিক ফ্রন্ট, হেফাজতে ইসলাম সংশ্লিষ্ট কিছু গোষ্ঠীসহ আরও কয়েকটি আঞ্চলিক ইসলামপন্থী সংগঠন।
বিভিন্ন দলের নেতারা জানিয়েছেন, তাদের উদ্দেশ্য কেবল নির্বাচনী সুবিধা অর্জন নয়; বরং দেশের রাজনীতিতে একটি নৈতিক, ধর্মীয় ও আদর্শিক অবস্থান প্রতিষ্ঠা করা। তারা মনে করছেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক শূন্যতায় ইসলামী মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে একটি বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির প্রয়োজন রয়েছে।
ইসলামী আন্দোলনের এক শীর্ষ নেতা বলেন,
“নির্বাচনের সময় রাজনীতিতে সুবিধাভোগীদের আনাগোনা বাড়ে, তবে আমরা আদর্শের জায়গা থেকে একত্রিত হচ্ছি। জনগণও এখন একটি বিকল্প খুঁজছে।”
বিশ্লেষকদের মতে, এই বৃহত্তর জোট দুইভাবে গঠিত হতে পারে:
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত করছে। তবে দলের আমির চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম সম্প্রতি এক সভায় বলেছেন,
“ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী সব দলকে আমরা আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, এই ভূমিতে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি টিকে থাকুক, দেশ রক্ষায় সবাই ঐক্যবদ্ধ হোক।”
যদিও ঐক্যপ্রচেষ্টা চলছে, তবে দলগুলোর মধ্যে আদর্শিক, সাংগঠনিক এবং নেতৃত্বের প্রশ্নে মতবিরোধ এখনো প্রকট। কে হবে নেতৃত্বে, কে কোন আসনে নির্বাচন করবে, এবং কারা কার সঙ্গে যুক্ত হবে—এসব নিয়ে রয়েছে নানান বিতর্ক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আহমদ কামরুজ্জামান বলেন,
“ইসলামী দলগুলোর ঐক্য বহুবার আলোচনায় এলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব এবং আস্থা সংকটের কারণে। এবার যদি সত্যিকারের ত্যাগের মানসিকতা আসে, তাহলে একটা বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি তৈরি হতে পারে।”
বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, দুর্নীতি, সামাজিক অবক্ষয় এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে অনেক সাধারণ মানুষ একটি সৎ, আদর্শিক ও সমাজবান্ধব রাজনৈতিক শক্তির আশায় আছে। ইসলামপন্থী দলগুলো এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে তৃতীয় শক্তি হিসেবে একটি উল্লেখযোগ্য অবস্থান তৈরি করতে পারে।
উপসংহার:
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের ইসলামী রাজনৈতিক অঙ্গনে যে নতুন জোট গঠনের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে, তা দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। এই জোট যদি আদর্শিক ঐক্য এবং নেতৃত্বের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে, তবে তারা নির্বাচনী মাঠে শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।
📝 সোর্স: