বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মাত্রা যোগ করতে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধনের জন্য আবেদন জমা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির পক্ষ থেকে ‘শাপলা’ প্রতীক চেয়ে আবেদন করা হয়েছে, যা দেশের জাতীয় ফুল হিসেবেও পরিচিত।
গতকাল ২২ জুন (রবিবার) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে উপস্থিত হয়ে দলের শীর্ষ নেতারা আবেদনপত্র জমা দেন। আবেদন জমা দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম, ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন।
নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের জন্য এনসিপি ‘শাপলা’কে প্রথম পছন্দ হিসেবে উল্লেখ করেছে। বিকল্প হিসেবে রাখা হয়েছে ‘কলম’ ও ‘মোবাইল’ প্রতীক। আবেদন জমা দেওয়ার পর দলের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য দেন আখতার হোসেন।
তিনি বলেন,
“আমরা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী নিবন্ধনের সকল শর্ত পূরণ করে আবেদন জমা দিয়েছি। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা তা গ্রহণ করেছেন এবং রিসিভ কপিও দিয়েছেন।”
এ সময় দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন,
“৫ তারিখে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ যেমন জয় পেয়েছিল, আগামীর জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ‘শাপলা’ প্রতীকেই বাংলাদেশের মানুষ জয় দেখাবে। আমরা বিশ্বাস করি, এনসিপির নেতৃত্বে ভবিষ্যতে দেশে একটি নতুন সরকার গঠিত হবে।”
দলটির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের জোর দাবি জানানো হয়েছে।
“গত ১৫ বছরে নির্বাচন কমিশনকে ধ্বংস করা হয়েছে। এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে পুনর্গঠন করে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতেই আজ আমরা এখানে এসেছি,”
— বলেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন কমিশন থাকবেই, কিন্তু তাকে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।”
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আত্মপ্রকাশ ঘটে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫। দলটি মূলত গড়ে উঠেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতৃত্বে। জুলাই-আগস্টের ‘গণঅভ্যুত্থান’–এর প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এনসিপি সংগঠিত হয়।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গত ১০ মার্চ নতুন দলগুলোর নিবন্ধনের আবেদন আহ্বান করে। ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ৬৫টি রাজনৈতিক দল আবেদন করে। এরপর সময়সীমা ২ মাস বাড়িয়ে ২২ জুন পর্যন্ত করা হয়।
নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে এনসিপি ছাড়াও ৪৫টির বেশি দল শেষ দিন পর্যন্ত আবেদন জমা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন এখন এসব দলের আবেদন যাচাই-বাছাই করছে।
বৈষম্যবিরোধী রাজনীতি, ‘গণঅধিকার প্রতিষ্ঠা’ ও নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গঠনের লক্ষ্যে এনসিপি ইতোমধ্যেই সাধারণ মানুষের মাঝে পরিচিতি তৈরি করছে বলে দাবি করেছেন দলটির নেতারা। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেলে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক ময়দানে প্রবেশ করবে দলটি।
তথ্যসূত্র: নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশ, এনসিপি প্রেস ব্রিফিং, প্রথম আলো, বিডিনিউজ২৪
লেখা: কালিকা প্রসাদ টিভি, রাজনৈতিক ডেস্ক