স্টাফ রিপোর্টার:
❝একটা জাতির ভাতের থালা যখন কাঁপে, তখন তা হয়ে ওঠে রাষ্ট্রের দায়িত্ব আর পুঁজির লোভের মধ্যকার এক অদৃশ্য যুদ্ধে লিপ্ত প্রতিচ্ছবি।❞
এই কথাটাই যেন পুরোপুরি মানায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আনন্দবাজারে ২৬ জুনের দৃশ্যপটে, যেখানে চালের বাজারে জনসাধারণের ক্ষোভ যখন চরমে, তখন মাঠে নামে সরকার ও প্রশাসন। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং জেলা খাদ্য বিভাগ এই যৌথ অভিযানে যা প্রমাণ করেছে—রাষ্ট্র আর শুধু নীতির মুখস্থ পাঠ নয়, বাস্তবের পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হতে চায়।
নেপথ্য কাহিনি: দুই দোকানে এক অপরাধ—জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা
অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ইফতেখারুল আলম রিজভী। সঙ্গে ছিলেন পরিদর্শক রামিম পাঠান, ক্যাব জেলা প্রতিনিধি এস এম শাহীন, এবং আনসার সদস্যরা।
এই অভিযান দুইটি স্বনামধন্য চালের দোকানে, শামীম ট্রেডার্স ও মোশারফ ট্রেডার্স, এমনসব অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে—যার মধ্যে ছিল:
অতিরিক্ত দাম নেওয়া, মূল্য তালিকা না রাখা, ক্রয়-বিক্রয়ের কোনো বৈধ ভাউচার না থাকা, এবং চালের উৎস সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো দলিল না থাকা। এ যেন চাল নয়, জনসাধারণের পেটকে নিছক লাভের হিসাব বানিয়ে ফেলা।
জরিমানা নয়, সামাজিক বার্তা: রাষ্ট্র এবার নীরব না
এই অনিয়মের জন্য শামীম ট্রেডার্সকে ৩০,০০০ টাকা ও মোশারফ ট্রেডার্সকে ২০,০০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
সহকারী পরিচালক রিজভী কঠোর ভাষায় বলেন:
> “বাজারে ন্যায্যতা রক্ষা আমাদের অঙ্গীকার। নিয়ম ভাঙলে জবাবদিহি হবেই।”
এই বার্তা প্রশাসনের শক্ত অবস্থানকে যেমন তুলে ধরে, তেমনি এটাও প্রমাণ করে—এই সরকার লোক দেখানো অভিযান নয়, নীতির বাস্তব প্রয়োগে বিশ্বাসী। সংকটকালে দায়িত্ববান নেতৃত্বই এক জাতিকে আশ্বস্ত করতে পারে, আর এই অভিযানে সেই চেষ্টার ছাপ স্পষ্ট।
জনগণের প্রতিধ্বনি: কথায় নয়, চালের দামে ন্যায় চাই
রিকশাচালক মজিবুর রহমান (৪৫) হতাশ কণ্ঠে বলেন,
> “দিনে ৪০০ কামাই, তার অর্ধেক চালেই গেল। কই যামু?”
গৃহিণী শারমিন আক্তার বলেন,
“চাল কিনতে গেলে মনে হয় যুদ্ধ করছি—তিন দিন চলবে, না পাঁচদিন ভাবতেই পারি না।”
তবে আশার বাণী শোনালেন শিক্ষিকা রাশেদা পারভীন:
> “এমন অভিযান যদি নিয়মিত হয়, তবেই ভোক্তারা কিছুটা স্বস্তি পাবে। আমরা তো আর কোটিপতি না, ন্যায্য দামটাই চাই।”
ভবিষ্যতের ভাবনা: গোডাউনের তালা ভাঙতে হবে
এই অভিযান যদি একদিনের হয়ে থেমে না যায়, বরং গোডাউন আর পাইকারি সিন্ডিকেট পর্যন্ত পৌঁছে—তবেই তা হবে পূর্ণাঙ্গ সাফল্য।
শুধু শহরে নয়, গ্রামে-গঞ্জেও এই নজরদারি গেলে, অসাধু ব্যবসায়ীরা বুঝে যাবে—
“এখন আর জনগণ শুধু ভোট দেয় না, দরকারে প্রশ্নও তোলে। আর প্রশাসনও এখন আর শুধু বসে থাকা নয়—মাঠে থাকা।”
উপসংহার: পাতে চাল না থাকলে, গণতন্ত্রও অপূর্ণ
চাল এ দেশের মানুষের শুধু খাদ্য নয়—এটি অস্তিত্বের প্রতীক, আত্মমর্যাদার প্রতিচ্ছবি।
এই অভিযানে সরকার যেমন দায়িত্ব দেখিয়েছে, তেমনি প্রশাসনের তৎপরতা প্রমাণ করেছে—
❝শাসন শুধু আইন প্রয়োগে নয়, মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার মধ্যেই রাষ্ট্রের আসল পরিচয়।❞
এই অভিযান কেবল জরিমানা নয়, এটা ছিল সামাজিক ন্যায়বিচারের শুরুর সাইরেন। ভোক্তার পক্ষে দাঁড়িয়ে প্রশাসন যে সাহসিকতা দেখিয়েছে—সেই ন্যায়ের সুবাসই হয়তো আগামী দিনে মানুষকে বিশ্বাস ফিরিয়ে দেবে।