লুৎফর সিকদার, গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
৯ জুলাই ২০২৫
“মাছে-ভাতে বাঙালি”—এই প্রবাদ এখন যেন শুধুই অতীত স্মৃতি। মাছের ভাণ্ডারখ্যাত গোপালগঞ্জ জেলার নদী, খাল, বিল ও হাওর থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। অবাধে ব্যবহৃত কারেন্ট জাল, ম্যাজিক জাল, ভেসাল, সুতিজাল ও বেহুন্দী জাল মাছের প্রজনন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিচ্ছে। প্রজননের মৌসুমেও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ধরা হচ্ছে ডিমওয়ালা মাছ ও পোনা—ফলে মাছের প্রাকৃতিক বংশবৃদ্ধি চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, এক সময় গোপালগঞ্জের জলাশয়গুলোতে পাওয়া যেত শোল, গজার, বোয়াল, টেংরা, খলসে, রুই, কাতল, পাবদা, আইড়, রিটা, বাইম, বেলে, বেতাগা, কালিবাউসসহ অর্ধশতাধিক দেশীয় প্রজাতির মাছ। এখন এসবের মধ্যে অনেক মাছ বিলুপ্তপ্রায় অথবা দুর্লভ হয়ে পড়েছে—বিশেষত রঙিন বেতাগা, রিটা, আইড়, বাশঁপাতা ও পাবদার মতো মাছ।
অতিরিক্ত সেচ দিয়ে মাছ ধরা, প্রভাবশালীদের মাধ্যমে খাল ও বিল দখল করে মাছ শিকার—এসব কারণেও ধ্বংস হচ্ছে শামুক, ব্যাঙ, সাপসহ জলজ পরিবেশ। ফলে এক ভয়াবহ পরিবেশগত সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে গোটা অঞ্চল।
কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা জান্নাত বলেন,
“মৎস্য বিভাগের সহায়তায় ১২-১৪টি অভিযানে প্রায় দুই হাজার ম্যাজিক জাল ও কয়েক হাজার মিটার কারেন্ট জাল ধ্বংস করা হয়েছে।”
তবে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আনিচুর রহমান প্রধান জানান,
“অর্থ ও লোকবল সংকটের কারণে প্রতিদিন অভিযান চালানো সম্ভব নয়। তবুও আমরা চেষ্টা করছি।”
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজন নন্দী বলেন,
“দেশীয় মাছ সংরক্ষণে জাল ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, কিন্তু সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা এখনও চ্যালেঞ্জ।”
সচেতন মহলের মতে, শুধু অভিযান নয়, প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও স্থানীয়দের সম্পৃক্ততা। না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেশীয় মাছ দেখাতে হবে শুধু ছবিতে।