আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তীব্র হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘ইহুদিবাদী শত্রু বড় অপরাধ করেছে, শাস্তি পেতেই হবে।’ ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, তেহরান এই অপরাধের জবাব দিতে প্রস্তুত, এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘বড় প্রতিশোধ’ নিতেও দ্বিধা করবে না।
সোমবার (২৩ জুন) তেহরানে এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে এই কঠোর বার্তা দেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলের হামলায় ইরানের একাধিক পরমাণু স্থাপনা এবং সামরিক স্থাপনায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি ইসরায়েলি অভিযানে অন্তত ১০ জন ইরানি পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।
খামেনি বলেন, ‘ইহুদিবাদী শত্রু এবার এমন অপরাধ করেছে, যার পরিণতি তাদের ভুগতেই হবে। এই অপরাধের জবাব হবে কঠোর ও শিক্ষণীয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইরানের প্রতিক্রিয়া হবে এমন, যা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইসরায়েল ইরানের ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর পর থেকেই পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। পাল্টা জবাবে ইরানও ইসরায়েলের বিভিন্ন সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
এর আগে ইরানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, তারা কখনো সংঘাত শুরু করতে চায়নি, তবে নিজের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য যে কোনো পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।
আয়াতুল্লাহ খামেনির এই বক্তব্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, সাধারণত তিনি আন্তর্জাতিক ইস্যুতে সরাসরি যুদ্ধের হুমকি দিয়ে বক্তব্য দেন না। এবার তার এই স্পষ্ট বক্তব্য ইঙ্গিত দিচ্ছে, ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সামরিক ও কূটনৈতিক উভয় স্তরেই বড় ধরনের পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরানের এই প্রতিক্রিয়া কেবল মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা চিত্রকেই বদলে দেবে না, বরং আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোকেও সরাসরি এই সংঘাতে জড়িয়ে ফেলতে পারে। ইতোমধ্যেই রাশিয়া, চীন এবং অন্যান্য আঞ্চলিক মিত্রদের সঙ্গে ইরান কৌশলগত আলোচনা শুরু করেছে বলে খবর রয়েছে।
ইরান-ইসরায়েলের চলমান এই উত্তেজনা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ইতোমধ্যে এই বিষয়ে জরুরি বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। ইরান জাতিসংঘে পাঠানো চিঠিতে স্পষ্টভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, যদি ইরান এই মুহূর্তে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালায়, তবে সেটি মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে নতুন করে ভয়াবহ যুদ্ধের দ্বার উন্মুক্ত করবে। বিশেষ করে লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদেরও সরাসরি যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আয়াতুল্লাহ খামেনির এই বক্তব্য শুধু কথার ঝড় নয়, বরং ইরানের দীর্ঘদিনের প্রতিরোধ নীতির প্রকাশ। এবার ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নতুন মাত্রায় পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক তৎপরতা আরও জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
সূত্র: আল-জাজিরা, রয়টার্স, তাসনিম নিউজ, বিবিসি