মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর এবার ইসরায়েলের বুকে পাল্টা ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে তেহরান। বিশেষ করে তেল আবিবসহ ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি শহরে ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। ইসরায়েলের জরুরি সেবা সংস্থা মাগেন ডেভিড আদম (এমডিএ) জানিয়েছে, এ হামলায় ১১ জন আহত হয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়া মানুষের উদ্ধারে চলছে নিরবচ্ছিন্ন অভিযান।
রবিবার (২২ জুন) সকালে ইরানের ছোড়া প্রায় ২০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বিভিন্ন এলাকায় আঘাত হানে। তেল আবিবের আবাসিক এলাকায় বেশ কয়েকটি ভবন ধসে পড়েছে। বিশেষ করে দ্বিতল ভবনগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইসরায়েলের জরুরি সংস্থাগুলোর কর্মীরা ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এমডিএ এক বিবৃতিতে জানায়, ‘হামলায় কিছু ভবনের একাংশ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেকের আটকে থাকার শঙ্কা রয়েছে।’
তেল আবিব ছাড়াও হাইফা, রিশন লেটসিওন ও নেতানিয়া শহরেও ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতের খবর পাওয়া গেছে। গোলাবারুদের আঘাতে বিভিন্ন এলাকায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, ধ্বংসস্তূপের মাঝে উদ্ধারকারী দল তল্লাশি চালাচ্ছে, আশপাশে আতঙ্কিত মানুষের ভিড়।
ইসরায়েলি পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে।
এদিকে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী (আইডিএফ) জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবেই ইরান এই পাল্টা আক্রমণ চালিয়েছে। ‘এটা প্রথম ধাক্কা মাত্র,’ বলে সতর্ক করেছে আইডিএফ।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আরও দাবি করেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে, তবে তেল আবিবের ওপর দিয়ে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানে।
জেরুজালেমেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, জানিয়েছেন সেখানকার এক সংবাদকর্মী। ‘ভোর রাত থেকেই আকাশে ক্ষেপণাস্ত্রের আলোর রেখা ও বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাওয়া গেছে,’ বলেন তিনি।
এদিকে প্রতিবেশী দেশ জর্ডানেও সতর্কতা সাইরেন বাজতে শোনা গেছে। আকাশপথ ব্যবহার বন্ধ রাখা হয়েছে বহু অঞ্চলে। আকাশে যুদ্ধবিমানের গর্জন চলছে অবিরাম।
যুক্তরাষ্ট্রের হামলার বিরুদ্ধে ইরান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাঈদ ইরাভানি যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে ‘আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি গুরুতর হুমকি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
তেহরান থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি আমাদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে। এটি আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘ সনদ ও এনপিটি চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’
ইরান দাবি করেছে, হামলা চালানোর আগে বা পরে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (IAEA) কোনো অনুমোদন ছিল না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংঘাত এখন আরও ভয়াবহ পরিণতির দিকে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইরান, ইসরায়েল—সব পক্ষই প্রস্তুতি নিচ্ছে পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কূটনৈতিকভাবে সমাধানের আহ্বান জানালেও যুদ্ধ পরিস্থিতি দিনকে দিন জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে।
পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে এই সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যের বাইরেও প্রভাব ফেলতে পারে, এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে।
লেখা: কালিকা প্রসাদ টিভি নিউজ ডেস্ক