মুহাররম মাসের ১০ তারিখ, তথা আশুরা, ইসলামের ইতিহাসে এক তাৎপর্যপূর্ণ দিন। এই দিনে মহান আল্লাহ বহু নবীকে সম্মানিত করেছেন, যেমন—মূসা (আ.)-কে ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি দিয়েছেন, নূহ (আ.)-এর নৌকা তূর পর্বতের গিরিতে স্থিত হয়। একইসাথে আশুরার দিনেই কারবালায় শাহাদতবরণ করেন রাসুলুল্লাহ ﷺ- এর প্রিয় দৌহিত্র হযরত হুসাইন (রাঃ) ও তার পরিবারবর্গ।
এই সব ফজিলতের পাশাপাশি দুঃখজনকভাবে এই দিনকে ঘিরে সমাজে অনেক বিদআত ও গর্হিত কাজ প্রচলিত হয়ে পড়েছে, যেগুলো শরিয়তের পরিপন্থী। নিচে এমন কিছু প্রচলিত ভুল ও গর্হিত কাজ তুলে ধরা হলো:
অনেকে হযরত হুসাইন (রাঃ)-এর শাহাদাতের শোক প্রকাশে গাল চাপড়ানো, বুক কাটা, শরীর রক্তাক্ত করা এবং তাজিয়া মিছিল করে থাকেন। অথচ,
রাসুল ﷺ বলেন: “সে আমাদের দলভুক্ত নয়, যে গালে আঘাত করে, কাপড় ছিঁড়ে ফেলে এবং জাহেলিয়াতের মতো আহাজারি করে।”
(সহিহ বুখারি: ১২৯৭, সহিহ মুসলিম: ১০৩)
আশুরাকে শোক দিবস মনে করে কেউ কেউ কালো কাপড় পরে, বিষণ্ণ পরিবেশ তৈরি করে। কিন্তু ইসলামে শোক পালন করার নির্দিষ্ট সময়সীমা ও পদ্ধতি আছে, তা আশুরার জন্য প্রযোজ্য নয়।
অনেকে আশুরার দিনে হালুয়া-রুটি বা অন্য কোনো বিশেষ খাবার রান্না করে তা ‘বরকতময়’ মনে করেন। এটি শরিয়ত সম্মত নয়।
ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন: আশুরার দিনে রান্না করা, সাজসজ্জা, গোসল, নতুন পোশাক পরা বা কোনো উৎসব করা — এসব রাসুল (সা.) ও সাহাবীদের আমল ছিল না।
(আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা: ২/২৫৭)
কিছু মানুষ আশুরার দিনে বিশেষ গোসল, সুরমা বা প্রসাধন ব্যবহারে রোগমুক্তি বা বরকত পাওয়ার বিশ্বাস পোষণ করে থাকেন। এটি কুসংস্কার ও ভিত্তিহীন।
আহলে বাইতের নামে বাড়াবাড়ি করে অনেকে সাহাবাদের (বিশেষ করে হযরত মুয়াবিয়া রাঃ)-কে গালাগালি করেন। এটি স্পষ্টভাবে ইসলামবিরোধী।
রাসুল ﷺ বলেন: “আমার সাহাবাদের গালি দিয়ো না।”
(সহিহ বুখারি: ৩৬৭৩)
৬. আশুরাকে উৎসবের দিন বানানো
কোনো কোনো চক্র শোকের প্রতিক্রিয়ায় এই দিনকে উৎসবে রূপ দিতে চায়। ইসলামে আশুরা neither শোক দিবস nor আনন্দ উৎসব— বরং এটি আত্মশুদ্ধি ও রোজার দিন।
আশুরার প্রকৃত ফজিলতপূর্ণ আমল হলো রোজা রাখা।
রাসুল ﷺ বলেন: “আমি আশা করি, আশুরার রোজা আগের এক বছরের গুনাহ মোচনের কারণ হবে।”
(সহিহ মুসলিম: ১১৬২)
তিনি আরও বলেন: “তোমরা আশুরার রোজা রাখো এবং তার আগে বা পরে আরেক দিন রোজা রাখো।”
(মুসনাদ আহমদ: ২১৫৪)
আশুরা একটি মর্যাদাপূর্ণ দিন— তবে তা স্মরণ ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে পালন করা উচিত, বিদআত ও কুসংস্কারের মাধ্যমে নয়। আসুন, কোরআন ও হাদিসের আলোকে আশুরার প্রকৃত গুরুত্ব অনুধাবন করে শরিয়তের পথেই চলি।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে আশুরা পালনের তাওফিক দান করুন। আমিন।