ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার চরচারতলা এলাকায় গভীর রাতে সেনা ও যৌথ বাহিনীর অভিযান ঘিরে নেমে এসেছে ভয় ও বিস্ময়ের ছায়া। বুধবার দিবাগত রাতে আশুগঞ্জ আর্মি ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন ইমরানের নেতৃত্বে পরিচালিত হাই-রিস্ক অভিযানে একটি বিদেশি রিভলভার ও দুটি গুলি উদ্ধার হয়। পাশাপাশি আটক করা হয়েছে মো. আসাদ মিয়া (৩৮) নামের একজনকে, যার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক অপরাধমূলক সংশ্লিষ্টতা।
চরচারতলা আলাল শাহ মাজার সংলগ্ন নিরিবিলি গ্রামটিতে হঠাৎ মধ্যরাতের অভিযানে ছন্দপতন ঘটে। মূল অভিযুক্ত সাদ্দাম হোসেন—যিনি অতীতে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট সংঘটিত ছাত্র-জনতা নিপীড়নের মামলার এজাহারভুক্ত আসামি—তিনি অভিযানের আগেই এলাকা ত্যাগ করেন। তবে তার ভাই আসাদ মিয়াকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয় দুটি স্মার্টফোন, গুলি এবং মাটির নিচে পুঁতে রাখা রিভলভারসহ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অস্ত্রটি প্রায় ৪-৫ ফুট গভীরে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল, যা উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া সদস্যদের অভিজ্ঞতা ও তথ্যনির্ভর তৎপরতারই প্রমাণ। আশুগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খাইরুল আলম জানান, “আসাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে এবং তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।”
এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে চরম উদ্বেগ বিরাজ করছে। সাদ্দামের পলায়ন এবং তার অপরাধমূলক অতীত প্রশ্ন তুলেছে—তার অবস্থান সম্পর্কে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কি জানত না, না কি কেউ তাকে রক্ষার ছায়া হয়ে দাঁড়িয়েছে?
এই অভিযান যেমন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দক্ষতা ও প্রস্তুতির ইঙ্গিত দেয়, তেমনি রাজনৈতিক আশ্রয়ে গজিয়ে ওঠা অপরাধীচক্রের দৌরাত্ম্য এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করেও নতুন করে আলোচনার জন্ম দেয়।
চরচারতলার নীরবতা যেন এখন প্রশ্নবিদ্ধ—বিচার কি সত্যিই নাগালের মধ্যে? রাষ্ট্রের শক্তি কি নিঃসন্দেহে ন্যায়ের পক্ষে? আর যদি এই অভিযান হয় একটি বৃহৎ শুদ্ধি অভিযানের সূচনা, তবে দরকার রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় বেড়ে ওঠা অপরাধীদের গোঁড়া থেকে নির্মূল করা; অন্যথায়, এই অস্ত্র আবার কোনো এক রাতে নিস্তব্ধতা ভেঙে চিরচেনা রক্তাক্ত গল্পই ফিরিয়ে আনবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : আরিফুল ইসলাম আশিক
২০২৫ © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত