আল্লাহ তায়ালা কখনো বলেননি যে এ দুনিয়া হবে শুধু আরাম, সুখ, নিরাপত্তায় ভরা। বরং তিনি স্পষ্ট বলেছেন, প্রতিটি মানুষের পরীক্ষা নেওয়া হবে। এই দুনিয়া মূলত পরীক্ষার ক্ষেত্র, জান্নাত নয়। এখানেই আল্লাহ আমাদের ঈমান, ধৈর্য এবং তাঁর প্রতি ভরসা কেমন তা যাচাই করেন।
পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো — বান্দা সুখ–দুঃখ সব অবস্থায় আল্লাহর দাসত্বে অটল থাকে কিনা। তিনি দেখতে চান, আমরা শুধু স্বস্তির সময়েই তাঁর ইবাদত করি, নাকি কষ্টের মাঝেও তাঁর দিকে ফিরে যাই।
ইবনুল জাওযি (রহি) একবার বুঝতে পারেন, তাঁর ইবাদতগুলো অভ্যাসের কারণে হচ্ছিল, গভীর ভালোবাসা ও আস্থার কারণে নয়। তাই আল্লাহ বলেন:
“মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আছে যারা আল্লাহর ইবাদত করে যেন এক কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকে। সামান্য কষ্ট পেলেই সে ফিরে যায়।” (কুরআন)
অর্থাৎ অনেকে শান্তির সময়ে ঈমানদার থাকে, কিন্তু বিপদের মুখোমুখি হলে তার বিশ্বাস ভেঙে পড়ে।
তা’ইফের ঘটনার সময় রাসূল ﷺ রক্তাক্ত অবস্থায় বলেছিলেন:
“যদি তুমি আমার উপর রাগান্বিত না হও, তাহলে এই কষ্ট আমার কাছে কিছুই না।”
এতে বোঝা যায়, তাঁর কাছে আসল বিষয় ছিল শুধু একটাই — আল্লাহ তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট কিনা।
প্রতিটি কষ্ট বা বিপদের একটি কারণ থাকে। আপনার জীবনে যখন কষ্ট এলো, তখন দেখুন—
যদি গুনাহর পর বিপদ আসে, বুঝবেন এটি জাগ্রত হওয়ার জন্য আল্লাহর সতর্কবার্তা।
আর যদি আপনি ভালো অবস্থায় থেকেও কষ্টে পড়েন, বুঝবেন এটি পরীক্ষা এবং আল্লাহর ভালোবাসারই নিদর্শন।
রাসূল ﷺ বলেছেন:
এছাড়া হাদিসে এসেছে:
“যখন আল্লাহ কোনো জাতিকে ভালোবাসেন, তখন তাঁদেরকে পরীক্ষা করেন। যারা সন্তুষ্ট থাকে, তারা পান আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর যারা রাগ করে, তারা পান আল্লাহর রাগ।”
রাসূল ﷺ বলেছেন:
“আল্লাহ যখন কাউকে ভালোবাসেন, তিনি তাকে দুনিয়া থেকে রক্ষা করেন, যেমন একজন অসুস্থকে ঠাণ্ডা পানি থেকে দূরে রাখা হয়।”
অর্থাৎ অনেক সময় আল্লাহ আমাদের চাওয়া পূরণ করেন না, কারণ তিনি জানেন তা আমাদের জন্য ক্ষতিকর। তাই প্রত্যাখ্যান মানেই আল্লাহ ছেড়ে দিয়েছেন, তা নয়।
ইবনু মাসউদ (রা) নবীজি ﷺ-কে একদিন বললেন, “আপনি তো খুব অসুস্থ।”
নবীজি ﷺ উত্তর দিলেন, “আমার কষ্ট দ্বিগুণ, কারণ আমার পুরস্কারও দ্বিগুণ হবে।”
এ থেকেই বোঝা যায়, কষ্ট মানেই শাস্তি নয়, বরং অনেক সময় পুরস্কারের কারণ।
ইবনু আউন (রহি) বলেন:
“সুখ–দুঃখ যাই আসুক, আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকো। এটাই সবচেয়ে নিরাপদ পথ।”
যখন দারিদ্র্য, অসুস্থতা বা ক্ষতির মাঝেও আপনি শান্ত থাকেন, তখন বোঝা যায় — আপনার ঈমান দৃঢ় হচ্ছে।
ধরুন, কারও সন্তান মারা গেছে। কিন্তু যদি সে দেখতে পেত, ফেরেশতারা তার সন্তানকে জান্নাতে নিয়ে গেছে, হযরত ইবরাহিম (আ.) আর সারাহ তাঁকে বরণ করছেন — তাহলে কি দুঃখ বাকি থাকত?
অতএব, আমরা বুঝতে পারি না কোন ক্ষতির আড়ালে কত বড় পুরস্কার লুকানো আছে।
এই দুনিয়ায় সব চাওয়া পূরণ হবে না। এখানে মানুষের কাজ হলো চেষ্টা করা, ধৈর্য ধরা এবং আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া।
আল্লাহ বলেন:
“যে তাকওয়া অবলম্বন করে, আল্লাহ তার জন্য সংকট থেকে উত্তরণের পথ খুলে দেন।” (সূরা তালাক ২)